প্রকাশিত: ২৫/০৬/২০১৭ ৩:২১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৪৬ পিএম

নিউজ ডেস্ক::

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জিততে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্য মাথায় রেখে জেতার সামর্থ্য বেশি এমন প্রার্থীর সন্ধানে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে দলটি।

দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে অন্য গুণাগুণ ছাড়াও নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কার কতটা সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তিন ধাপে।

আওয়ামী লীগ প্রথম ধাপে ১০০ আসনে নিজ দল ও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থানসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। নির্বাচন সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এমন ১০০ আসনে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রথম ধাপে। তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই শেষে এসব আসনে যাঁদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার যোগ্য বলে ঠিক করবে আওয়ামী লীগ, তাঁদের নির্বাচনী কাজ শুরু করার সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। এরপর জয় পাওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে এমন ১০০ আসনে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। আর তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট ১০০ আসনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী এবং দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ওই নেতারাসহ আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তথ্য সংগ্রহ শেষে মনোনয়নের জন্য এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যাঁদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনেও জয়ী হওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে হবে। প্রার্থীর সততা, ত্যাগ বা অন্যান্য যোগ্যতাই শুধু নয়, ভোটের হিসাব-নিকাশে যাঁদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখা যাবে তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া হবে নৌকার টিকিট। ফলে বিতর্কিত অনেক বর্তমান এমপিও আগামী নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। আবার উল্টোটাও ঘটবে। দলের ‘জনবিচ্ছিন্ন’ অনেক বর্তমান এমপিকে আগামী দিনে আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। চলতি সংসদে আওয়ামী লীগের ৫০-৬০ জন সদস্য আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।

সূত্র মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিংবা দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়ে একাদশ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই অংশ নেবে। ফলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ফলে ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে চাইলে জয়ের সম্ভাবনা আছে, এমন প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিকল্প নেই। ক্ষমতাসীন দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রথমে দেখতে হবে প্রার্থীর জয়ের সামর্থ্য আছে কি না, এর পরে বিবেচনায় নেওয়া হবে তিনি ভালো নাকি মন্দ লোক, হাইব্রিড নাকি পুরনো আওয়ামী লীগার, আওয়ামী লীগে তাঁর ত্যাগ কতটুকু সেসব বিষয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনের মূল কাজ শুরু হবে কোরবানির ঈদের (ঈদুল আজহা) পর। এখন আমরা তদন্তের কাজ করছি। তদন্ত মানে তথ্য সংগ্রহ। যে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে বলে আমরা মনে করি এমন ১০০ আসনে তথ্য সংগ্রহের কাজ এখন চলছে। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষ হলে এ আসনগুলোতে আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দেব। তাঁরা মাঠে নেমে যাবেন। এর পরে আমরা দ্বিতীয় ধাপে আরো ১০০ আসনে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করব। যে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়লাভের বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে সেগুলো থাকবে দ্বিতীয় ধাপে। এর পরে অন্য ১০০ আসন নিয়ে আমরা কাজ করব। ’

কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডেরও সদস্য। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হবে না। সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নেব। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তরুণ অনেক নেতার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনেক বয়োবৃদ্ধ এমপির আসনে এবার তরুণদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। ’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নিশ্চিত জয় বা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন ২০০ আসনে প্রার্থীদের আমরা প্রথম দুই ধাপে সবুজ সংকেত দেব। শেষ ধাপে বিএনপির শক্ত অবস্থান আছে এমন ১০০ আসন নিয়ে আমরা কাজ করব। ’

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং দলীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাঁরা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে। তবে অনেক সময় তাঁদের বিকল্প প্রার্থীও পাওয়া যায় না। এখন কেউ এমপি আছেন বলে তাঁকেই মনোনয়ন দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেখানে ভালো প্রার্থী পাওয়া যাবে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। আগে একটা বিষয় ছিল যে কেউ একবার এমপি হলে তাঁকে তিনবার মনোনয়ন দেওয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে রকমটা করার উপায় নেই। অনেক এমপি এমনভাবে জনপ্রিয়তা হারান যে তাঁদের পরিবর্তন না করলে ওই আসনগুলোই হারাতে হয়। ’ তিনি বলেন, ‘কিছু আসন টার্গেট করে আমাদের কাজ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে দেড় শর বেশি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন যেন করতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে আমাদের। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে যাঁরা জয়লাভ করতে পারবেন, তাঁদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি এমপি আছেন কি নেই, দলে তাঁর কী অবস্থান, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে না। যাঁর জয়ের বাস্তবতা আছে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। ’

সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, ‘আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা সুশীলসমাজকে দায়িত্ব দেন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে রিপোর্ট নেন, আমাদের তৃণমূল থেকে মনোনয়ন আসে—এগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিজেরাও বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। সেগুলোও মূল্যায়ন করা হবে। ’

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলাকায় জনপ্রিয়তা ও দলের মধ্যে অবস্থান এই দুটি বিষয় সমন্বয় করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। এবার তরুণদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়ন পাবেন। আর প্রতি নির্বাচনেই বেশ কিছু প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। এবারও হবে। যাঁরা এলাকায় জনপ্রিয়তা রক্ষা করতে পারেননি, দলের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাঁরা এবার মনোনয়ন পাবেন না। ’

ক্ষমতাসীন দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ত্যাগী লোককে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলকে তো আর বিরোধী দলে নেওয়া যাবে না। দল ক্ষমতায় থাকলে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের নানা পথ খোলা থাকে। আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দলকে ক্ষমতায় রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এটি আমাদের সব নেতাকর্মীকেই বুঝতে হবে। ’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক জায়গায় এমপিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। সেগুলোর বিষয়ে ওই এমপিদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে যেন তাঁরা সংশোধন হয়ে যান। যাঁরা সংশোধন হবেন না তাঁদের আগামী দিনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আগামী নির্বাচনে সব বিতর্কিত এমপিকে আমরা বাদ দিতে পারব না। ’ উদাহরণ তুলে ধরে ওই নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁর এলাকায় ভোটের যে সমীকরণ তাতে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করলে জয়লাভ করার সম্ভাবনা কম। ’

আগামী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। গত মঙ্গলবার ঢাকায় যুবলীগের এক ইফতার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার জরিপে যাঁরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন না, যাঁরা উইনেবল ক্যান্ডিডেট (জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী) নন, তাঁরা নিশ্চয়ই মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন পাবেন উইনেবল ক্যান্ডিডেটরা। যাঁরা উন্নয়ন করেছেন, যাঁদের জনপ্রিয়তা আছে, তাঁরাই নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন

পাঠকের মতামত

২ বাংলাদেশিকে গুলি করে মারল বিএসএফ, মরদেহ নিয়ে গেল ভারতীয় পুলিশ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খয়খাটপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। পরে তাদের ...